প্রতিমা ডটকম( ১০ মার্চ) :: কালসর্প দোষ। জীবনের খারাপ সময় ডেকে আনার পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জানেন কী এই কালসর্প দোষ। জন্মকুণ্ডলীতে যদি রাহু এবং কেতুর মাঝে সবকটি গ্রহ অবস্থান করে তখন এই দশা হয়‚ একেই বলে কালসর্প যোগ বা কালসর্প দোষ। বিভিন্ন পুজোর মাধ্যমে দোষ কাটে, জন্মের ছকেই কালসর্প দোষ দেখা যায়। কিন্তু মহা শিবরাত্রিতে বিশেষ পুজোর মাধ্যমে জীবনের খারাপ সময়কে সরিয়ে ফেলা যায় সহজেই।
বলা হয় পূর্ব জন্মের ভুল বা দোষে বর্তমান জন্মে কাল সর্প দোষ কুন্ডলীতে আসে। আবার যদি কেউ কোনও সাপের ক্ষতি করেন পূর্ব জন্মে বা বর্তমান জন্মে, তবেও এই দোষ ধরা যায়। মোট ১২ রকমের কালসর্প যোগ রয়েছে। এক একটি সাপের নামে নামকরণ হয়েছে দশাগুলোর।
পুরাণ অনুসারে জানা যায়, সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃত পান করেছিল স্বরভানু নামে এক অসুর। তাই বিষ্ণু ওই অসুরের মুণ্ডচ্ছেদন করেন মোহিনীরূপে। কিন্তু অমৃতপানের ফলে অমরত্ব লাভ করে সেই মুণ্ড আর ধড়। মুণ্ডটিই রাহু আর দেহটি পরিচিত কেতু হিসেবে। এগুলি মহাবিশ্বে ঘুরে বেড়াতে থাকে।
মহা শিবরাত্রিতে যদি কেউ চান কাল সর্প দোষ কাটাতে, তবে বিশেষ পুজোর ব্যবস্থা করা হয়। নির্দিষ্ট ও যথাবিধ নিয়ম মেনে পুজো করলে কাটে কাল সর্প দোষ। নিয়ম গুলি হল
১. মহা শিবরাত্রির দিন খুব সকালে, বিশেষত ব্রাহ্ম মুহুর্তে উঠে পড়তে হয়। সূর্যোদয়ের দুঘন্টা আগের সময়কে ব্রাহ্ম মুহুর্ত বলে।
২. ঘুম থেকে উঠে পরিচ্ছন্ন অবস্থায় ধ্যানে বসা দরকার
৩. এরপর স্নান করে পরিষ্কার বস্ত্র পরিধান করা উচিত
৪. এরপর শুরু হয় দেবাদিদেব মহাদেবের পুজো। প্রথমেই সংকল্প করে নিতে হয়।
৫. শিবের ব্রত রেখে সারাদিন উপবাসে থাকতে হবে
৬. কোনও মহাদেবের মন্দিরে গিয়ে অথবা বাড়িতেই শিবলিঙ্গে জল বা কাঁচা দুধ ঢালতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে ধুতুরা ফুল, গোটা ফল, গোলাপ ও পঞ্চামৃত।
৭. মন্দিরে না গিয়ে বাড়িতেও নাগমূর্তি তৈরি করে পুজো করা যায়। রুপোর নাগ তৈরি করে বাড়িতে শিবলিঙ্গকে উৎসর্গ করতে পারেন।
৮. পুজো চলাকালীন যতবার সম্ভব ওম নমঃ শিবায় উচ্চারণ করা উচিত।
বৃহস্পতিবার মহা শিবরাত্রির নির্ঘণ্ট
ব্রতশ্রেষ্ঠ মহা শিবরাত্রির ব্রত পালন করলে শাস্ত্রমতে মহা পূণ্য লাভ হয়।
ব্রত্যের নিয়ম– শিবরাত্রির আগের দিন নিরামিষ খাওয়া উচিত। শিবরাত্রির দিন উপবাসী থেকে রাত্রি চার প্রহরে চার বার শিবলিঙ্গকে গঙ্গা জল, দুধ, দই, ঘি, মধু দিয়ে স্নান করানোর পর বেলপাতা, ধুতরো, নীলকণ্ঠ (নীল অপারিজতা), আকন্দ ফুল এবং বেল ও অন্যান্য ফল সহযোগে, ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ মহামন্ত্রে দেবাদিদেব মহাদেবের আরাধনা করাই রীতি। পরের দিন পারণ পালনের মধ্যে দিয়ে শ্রী শ্রী শিবরাত্রির ব্রত সমাপ্ত হবে।
পারণ মন্ত্র– ‘সংসারে ক্লেশ দগ্ধস্য ব্রতেনানেন শঙ্কর। প্রসীদ সুমুখোনাথ জ্ঞান দৃষ্টি প্রদোভব’।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুযায়ী-
চতুর্দশী আরাম্ভ–
বাংলা– ২৭ ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার, ১৪২৭।
ইংরেজি – ১১ মার্চ, বৃহস্পতিবার, ২০২১।
দুপুর– ২টো ৪০ মিনিট
শ্রী শ্রী শিবরাত্রি ব্রত উপবাস
নিশীথ রাত্রি (মধ্য রাত্রি ১১টা ২৩ মিনিট থেকে, রাত্রি ১২টা ১১ মিনিটের মধ্যে)
চতুর্দশী শেষ–
বাংলা– ২৮ ফাল্গুন, শুক্রবার, ১৪২৭।
ইংরেজি– ১২ মার্চ, শুক্রবার, ২০২১।
দুপুর– ৩টে ০৩ মিনিট
সকাল– ৯টা ৪৮ মিনিটের মধ্যে শিবরাত্রি ব্রতের পারণ।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে–
চতুর্দশী আরম্ভ–
বাংলা– ২৬ ফাল্গুন, বৃহস্পতিবার, ১৪২৭।
ইংরেজি– ১১ মার্চ, বৃহস্পতিবার, ২০২১।
দুপুর– ২টো ৪২ মিনিট ২৫ সেকেন্ড।
চতুর্দশী শেষ–
বাংলা– ২৭ ফাল্গুন, শুক্রবার, ১৪২৭।
ইংরেজি– ১২ মার্চ, শুক্রবার, ২০২১।
দুপুর– ০২টো ৪১ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড।
সকাল– ০৯টা ৪৮ মিনিট ৩২ সেকেন্ডের মধ্যে শ্রী শ্রী শিবরাত্রির পারণ।

