দীপন বিশ্বাস :: আকাশে মেঘের ভেলা আর শারদীয় শিউলি ফুলের গন্ধ জানান দিচ্ছে, আর বেশি দেরি নেই। কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে আসছেন দেবী দুর্গা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবকে ঘিরে এরই মধ্যে উৎসবের রঙে সেজে উঠেছে কক্সবাজার জেলা। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত সবখানেই এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
বিশেষ করে প্রতিমা শিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় মাটি-খড় দিয়ে তৈরি হচ্ছে দশভূজা দেবীর প্রতিমা। পূজার আগমনী বার্তা নিয়ে তাই এখনকার ব্যস্ততা উৎসবের ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে গেছে।
দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হতে এখনও প্রায় ৯ দিন বাকি। কিন্তু সেই প্রস্তুতির তোড়জোড় শুরু হয়েছে অনেক আগেই।
সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মৃৎশিল্পীরা ব্যস্ত প্রতিমা তৈরিতে। তাদের হাতের ছোঁয়ায় মাটির কাঠামোয় ধীরে ধীরে ফুটে উঠছে দেবীর সৌম্য রূপ। রঙ আর তুলির আঁচড়ে সেই প্রতিমাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠছে।
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে কক্সবাজারের মৃৎশিল্পীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বাঁশ, কাঠ, খড় ও কাদামাটির মিশ্রণে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ সূত্র জানায়, এই বছর জেলার ৯টি উপজেলায় মোট ৩১৭টি মণ্ডপে পূজিত হবে দেবী দুর্গা।
কক্সবাজার সদর ৩১টি, চকরিয়া উপজেলা ৬৯টি, উখিয়ায় ৯টি, কুতুবদিয়া ৪৫টি সহ অন্যান্য এলাকায় ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ১৫১টি প্রতিমা পূজা ও ১৬৬টি ঘটপূজা।
কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক স্বপন দাশ বলেন, কক্সবাজারে ৩১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছি।
এদিকে, দুর্গাপূজাকে ঘিরে আনন্দ-উচ্ছ্বাসে মেতেছে আয়োজক ও ভক্তরা। যদিও উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে ব্যয় বেড়েছে, তবুও পূজা উদযাপনে কোনো ভাটা নেই।
মৃৎশিল্পী মিল্টন ভট্টাচার্য বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার প্রতিমার চাহিদা অনেক বেশি। তাই দিন-রাত কাজ করতে হচ্ছে।
উপকরণের দাম বেড়েছে, তাই লাভ কম হচ্ছে। তবুও উৎসবকে ঘিরে আনন্দ উদ্দীপনা অনেক বেশি।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ সাইফউদ্দীন শাহীন বলেন, ‘অনেক সময়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক অসত্য তথ্য প্রচারিত হয়। তাই আমাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং এবং সাইবার পেট্রোলিং অব্যাহত থাকবে।
যারা এসব ভুল তথ্য প্রচার করবে, আমাদের আইনশৃঙ্খলা সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করছি। আমরা চাই না কোনো অপরাধ হোক, কিন্তু যদি কোনো ঘটনা ঘটে, তবে তা যেন সহজে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারি।’
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর এহ্তেশামুল হক বলেন, প্রতিটি মণ্ডপে কঠোর নিরাপত্তা থাকবে।ঝুঁকিপূর্ণ মণ্ডপে বিশেষ নজরদারি করা হবে। আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশে দুর্গোৎসব পালনের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
সনাতনী পঞ্জিকা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মহালয়া পড়েছে ২১ সেপ্টেম্বর, রবিবার। এই দিনে পিতৃপক্ষের অবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা হবে। এরপর ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠী, ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর অষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর বিজয়া দশমী। লক্ষ্মীপূজা ৬ অক্টোবর এবং কালীপূজা ২০ অক্টোবর।
২০২৫ সালে দেবীর আগমন গজে। গজ অর্থাৎ হাতি। শাস্ত্রমতে এই গজই দেবীর সবচেয়ে সেরা বাহন। দেবীর আগমন গজে হলে মর্ত্যলোক সুখ শান্তিতে ভরে ওঠে।ধরাধামে আসে সমৃদ্ধি। বলা হয়, এরফলে পূর্ণ হয় ভক্তদের মনের ইচ্ছা। কথিত রয়েছে, পরিশ্রমের সুফল মেলে গজে দেবীর আগমন হলে। বর্ষণের দিক থেকেও অতিবৃষ্টি বা অনবৃষ্টি হয় না। ফলত, বর্ষণও থাকে ঠিকঠাক।
এ বছর দেবী দুর্গার গমন হবে দোলা বা পালকিতে। শাস্ত্রমতে বলা হয়, ‘দোলায়াং মকরং ভবেৎ’, এর অর্থ, দোলা বা পালকিতে দেবী দুর্গার আগমন বা গমন হলে তার ফল মহামারী, ভূমিকম্প, অতিমৃত্যু। এরই সঙ্গে এর আরও ফলাফল রয়েছে। আর তা হল দুর্ভোগ ও দুর্যোগ। ফলত, দোলায় দেবীর গহমকে শুভ হিসাবে দেখা হচ্ছে না। যেহেতু বিজয়া দশমী বৃহস্পতিবার পড়েছে, তাই ২০২৫ সালে দেবীর গমন দোলায়। আর যেহেতু সপ্তমী সোমবার পড়েছে, তাই দেবীর আগমন গজে।