প্রতিমা ডেস্ক(৩১ জানুয়ারি) :: বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে ৪ মাসের মধ্যে ১৭৪ টি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন সংখ্যালঘু নিহত! আহত অসংখ্য। ক্ষয়ক্ষতিও হয়েছে বিস্তর।
এমনই বিস্ফোরক দাবি করল ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’।
গত বছরের ২১ অগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে বিষয়টা জানা গিয়েছে বলে দাবি করেন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্রকুমার নাথ।
ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর সংঘটিত হিংসাকে ইউনূস সরকার যে ভাবে ক্রমাগত ‘রাজনৈতিক ট্যাগ’ দিয়ে এসেছে, তারও নিন্দা করে ঐক্য পরিষদের দাবি, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বাস্তবকে অস্বীকার করা এবং প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় না-আনার কারণেই সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তরা আস্কারা পাচ্ছে। যার জেরে সংখ্যালঘুরা আরও বিপন্ন বোধ করছেন।’
গত ৩০ জানুয়ারী ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সাংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র জানান, ১৭৪টি ঘটনার মধ্যে ২৩টি খুন, ৯টি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বা গণধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট বা অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।
একই সঙ্গে সংগঠনটির অভিযোগ, ৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮০৪ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে ২১ অক্টোবর থেকে চার ধাপে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুত ৩২১ জনের মধ্যে ১০৩ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। এ ছাড়া, ৫৫ জন মহিলা অফিসারের মধ্যে ৩৩ জনকে চাকরি থেকে সরানো হয়েছে, যাঁদের মধ্যে ১৬ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বলে দাবি মণীন্দ্রর।
ঐক্য পরিষদের দাবি, প্রতিবেদনে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আসলে সার্বিক ঘটনার আংশিক চিত্র। কারণ, স্থানীয় নেতাদের নাম নানবিধ মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার কারণে ‘গ্রাউন্ড রিপোর্ট’ পুরোপুরি উঠে আসেনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ সেপ্টেম্বর পরিষদের তরফে দাবি করা হয়েছিল, অগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনকে ঘিরে গত ৪ অগস্ট থেকে ২০ অগস্ট পর্যন্ত ২১ দিনে বাংলাদেশে ২ হাজার ১০টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। এ সব তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা তাদের সংগঠনের শাখাগুলোর মাধ্যমে।
এই অভিযোগের সাড়ে তিন মাস পর গত ১১ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়, সেই ২ হাজার ১০টির মধ্যে ১ হাজার ৪১৫টি অভিযোগ অনুসন্ধান করে পুলিশ ১ হাজার ২৫৪টির সত্যতা পেয়েছে এবং ১৬১টির সত্যতা পাওয়া যায়নি। যে সব অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে ১ হাজার ২৩৪টি (৯৮.৪%) ঘটনাই ঘটেছে রাজনৈতিক কারণে।
ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের প্রতি বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছে, যা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত সরকারের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
ঐক্য পরিষদের অভিযোগ, মব জাস্টিসের নামে ন্যাক্কারজনক বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু হয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সংখ্যালঘু শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করার মধ্য দিয়ে। এর শিকার অনেক শিক্ষক আজও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে পারেননি।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত, সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস-সহ ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু অনেক নেতার বিরুদ্ধে যে সব ‘হয়রানিমূলক’ ও ‘মিথ্যা’ মামলা করা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে তাঁদের মুক্তির দাবিও জানিয়েছে ঐক্য পরিষদ।