মহাকুম্ভে প্রথম দিনে ‘অমৃত স্নানে’ ডুব ৩ কোটি ৫০ লাখ পুণ্যার্থীর

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

প্রতিমা ডেস্ক(১ জানুয়ারি) :: ভিারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ মেলা। ৪৫ দিনব্যাপী এই মেলায় প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ অংশ নেবেন বলে আশা করছেন মেলার আয়োজকরা।

রবিবার (১২ জানুয়ারি) পৌষ পূর্ণিমায় এবং সোমবার (১৩ জানুয়ারি) মকর সংক্রান্তিতে ৩ কোটিরও বেশি পূণ্যার্থী সঙ্গমে স্নান করেছেন।

আধ্যাত্মিকতা এবং আধুনিক প্রযুক্তির মিশ্রণে এবারের মেলা এক অন্য মাত্রা পেয়েছে।

জানা গেছে,প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভ মেলায় ‘অমৃত স্নান’ করতে প্রথম দিনে ডুব দিয়েছেন ৩.৫০ কোটি পুণ্যার্থী।

মকর সংক্রান্তির সকালে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী নদীর ত্রিবেণী সঙ্গমে হল এই ‘অমৃত স্নান’।

এ দিন ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রয়াগরাজে শুরু হয় মহাকুম্ভের এই স্নান।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে জানিয়েছেন, ‘মহাকুম্ভে প্রয়াগরাজে প্রথমদিনে ৩.৫০ কোটিরও বেশি সাধু এবং ভক্তরা ‘অমৃত স্নান’ করে পুণ্য লাভ করেছেন।

প্রথম অমৃত স্নান উৎসব সফলভাবে সমাপ্তির জন্য মহাকুম্ভ মেলা প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সাফাই কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন , ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন।’

এদিন সকালে প্রায় দেড় কোটি মানুষ ডুব দিয়েছিলেন গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতীর পবিত্র সঙ্গমস্থলে।

শুধু ভারতীয় নয়, বেশ কিছু বিদেশি ভক্তরাও অংশ নিয়েছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় এই পূণ্য স্নানের একাধিক ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে।

তাতে দেখা গিয়েছে, শীত উপেক্ষা করে কোটি কোটি ভক্ত ত্রিবেণী সঙ্গমে ডুব দিচ্ছেন৷

বলা বাহুল্য, ১৩ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এই মেলা চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এবারের মহাকুম্ভে ১৪৪ বছর পর রয়েছে বিশেষ যোগ।

তাই এবছরের মহাকুম্ভ মেলা অন্যবারের তুলনায় একটু বেশিই গুরুত্বপূর্ণ।

সেইসঙ্গে কুম্ভ মেলায় অংশগ্রহণ করছে ১৩টি আখড়া (হিন্দু ধর্মীয় আধ্যাত্মিক সংগঠন), যারা একটি সুচিন্তিত সময়সূচী অনুযায়ী পবিত্র স্নান কার্যক্রম সম্পন্ন করবে।

সেইকারণে মহা কুম্ভের সময় কোটি কোটি মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ শহরের চারপাশকে ঘিরে ফেলেছে চক্রব্যূহের মতো।

AI-এর মাধ্যমে জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ

মহাকুম্ভ মেলায় জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ এবং সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)। মেলায় AI-নির্ভর ক্যামেরা, RFID চিপযুক্ত Wrist Band, ড্রোন নজরদারি এবং মোবাইল অ্যাপ ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভিড়ের তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি শুধুমাত্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই নয়, অংশগ্রহণকারীদের জন্য মেলার অভিজ্ঞতাও আরামদায়ক করে তুলছে।

ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং ড্রোন শো

মেলায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) স্টল স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে ভক্তরা গঙ্গা আরতি এবং অন্যান্য ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অনুভূতি বাস্তবের মতো উপভোগ করতে পারবেন। মেলার বিশেষ আকর্ষণ হলো ২০০০ ড্রোনের আলোর শো, যা প্রয়াগরাজের আকাশে এক ভিন্ন আবহ তৈরি করবে।

11 ভাষায় পরিষেবা প্রদান করবে AI-চ্যাটবট

উত্তর প্রদেশ সরকার মেলার জন্য চালু করেছে ‘কুম্ভ সহায়ক’ নামে একটি AI চ্যাটবট। এটি WhatsApp এবং একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সহজে ব্যবহারযোগ্য। 11টি ভাষায় মেলা সম্পর্কিত তথ্য প্রদানকারী এই চ্যাটবট ভক্তদের যাত্রাকে সহজ এবং তথ্যপূর্ণ করে তুলবে।

নিরাপত্তার বিশেষ ব্যবস্থা

প্রায় ৪৫ কোটি মানুষের বিশাল সমাগম সামলানোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছে সাইবার পুলিশ স্টেশন, যেখানে 56 জন সাইবার বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত থাকবেন। মেলা এলাকায় বসানো হয়েছে 40টি ভেরিয়েবল মেসেজিং ডিসপ্লে। এছাড়াও, মোবাইল সাইবার টিমের মাধ্যমে দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা হবে।

আন্ডারওয়াটার ড্রোনের নজরদারি

মেলায় নিরাপত্তার নতুন সংযোজন হলো আন্ডারওয়াটার ড্রোন, যা গঙ্গার জলের তলদেশ পর্যবেক্ষণ করবে। এই ড্রোনগুলো আকাশপথের ড্রোনের সঙ্গে সমন্বয় করে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে।

20 জানুয়ারি 2025, মেলার গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রয়াগরাজে একটি বিশেষ ক্যাবিনেট বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও, হারানো জিনিস খুঁজে পাওয়ার জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে।

মহাকুম্ভ মেলা 2025 আধ্যাত্মিকতা এবং প্রযুক্তির এক অনন্য উদাহরণ। AI চ্যাটবট, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, সাইবার সুরক্ষা, এবং আন্ডারওয়াটার ড্রোন প্রমাণ করছে যে, প্রাচীন রীতিনীতি ও আধুনিক উদ্ভাবনের মেলবন্ধনে ধর্মীয় উৎসবের নতুন অধ্যায় রচিত হচ্ছে।