মহাকুম্ভ উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটে জনসুনামি : প্রথম দিনেই দেড় কোটির বেশি পূণ্যার্থীর স্নান

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

প্রতিমা ডেস্ক(১৩ জানুয়ারি) :: পৌষ পূর্ণিমার শুভলগ্নে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে প্রয়াগরাজে শুরু হয়েছে মহাকুম্ভ।

আর মহাকুম্ভ উপলক্ষে গঙ্গার ঘাটগুলিতে আছড়ে পড়েছে জনসুনামি।

শীতের প্রচণ্ড কামড় উপেক্ষা করে সকাল থেকেই পবিত্র গঙ্গায় ডুব দিয়ে চলেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আসা অসংখ্য ভক্ত।

উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, প্রথম দিনে বিকেল পর্যন্ত গঙ্গায় ডুব দিয়েছেন দেড় কোটির মতো পূণ্যার্থী।

জনস্রোতে অনেকেই পরিজন বা সঙ্গীছাড়া হয়ে পড়েছেন।

মেলা পরিচালন সমিতির বিশেষ উদ্যোগে সঙ্গীছাড়া হওয়া ২৫০ জনকে পরিবার বা দলের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

প্রতি বছর কুম্ভ মেলা বসলেও প্রতি বারো বছর আয়োজিত হয় মহাকুম্ভের।

আর এবারের মহাকুম্ভ চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অর্থা‍ৎ দেড় মাস।

আগামিকাল মঙ্গলবারই (১৪ জানুয়ারি) মকর সংক্রান্তি।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, গ্রহদের রাজা সূর্যদেব ধনু রাশি ছেড়ে সংক্রান্তির মকর রাশিতে গমন করেন। এবারে ১৪৪ বছর বাদে বিশেষ যোগ রয়েছে।

তাই মহাকুম্ভে স্নান করতে দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তদের ভিড় আছড়ে পড়তে শুরু করেছে।

পৌষ পূর্ণিমার পূণ্যলগ্নে গঙ্গায় ডুব দিয়ে পাপখণ্ডন করতে অনেকেই আগেভাগে এসে এরা বেঁধেছেন প্রয়াগরাজে।

এদিন সকাল থেকেই গঙ্গার ঘাটগুলিতে কার্যত জনসুনামি আছড়ে পড়েছিল।

বেলা বারোটার আগেই ৪০ লক্ষের বেশি পূণ্যার্থী সঙ্গম ঘাটে স্নান সেরেছেন।

তার মধ্যে রাশিয়া, স্পেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা বেশ কয়েকজন পর্যটককেও দেখা দিয়েছে।

মহাকুম্ভে যাতে অপ্রীতিকর কোনও ঘটনা না ঘটে তার জন্য ত‍ৎপর যোগী প্রশাসন।

স্থলভাগে যেমন বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনই জলপথেও একাধিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আকাশপথে ড্রোনের সাহায্যে চলছে নজরদারি।

প্রথম দিনের স্নানপর্ব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হওয়ায় মেলা পরিচালন সমিতি ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।

সমাজমাধ্যম ‘এক্স’ হ্যান্ডলে (পূর্বতন টুইটার) তিনি লিখেছেন, ‘মানবতার কল্যাণ পর্ব ‘মহাকুম্ভ-২০২৫’-এ পৌষ পূর্ণিমার দিন সঙ্গমে স্নানের জন্য সমস্ত পূণ্যার্থী, সন্ন্যাসী ও কল্পবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা।

প্রথম স্নান পর্বে দেড় কোটি পূণ্যার্থী এবং সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীরা গঙ্গায় ডুব দিয়ে বিশেষ পূণ্য অর্জন করেছেন।

প্রথম স্নান পর্ব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্য মেলা পরিচালন সমিতি, প্রশাসন থেকে সহযোগী সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পূণ্যর আশায় সবাই মহাকুম্ভে আসুন।’

মহাকুম্ভ থেকে আয় হবে ২ লক্ষ কোটি টাকা!

মহাকুম্ভে মহোৎসব প্রয়াগরাজে (Prayagraj)। সোমবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে উৎসব।

প্রথম দিনেই গঙ্গা, যমুনা ও পুরাণে বর্ণিত সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে পবিত্র স্নান (Holy Dip) সেরেছেন প্রায় ৫০ লক্ষ পুণ্যার্থী।

দেড় মাস ব্যাপী এই পার্বণ ঘিরে সাজ সাজ রব। বিরাট প্রভাব অর্থনীতিতেও।

মহাকুম্ভ থেকে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) সরকার আয় করবে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা।

শতাব্দী প্রাচীন মহাকুম্ভে এবছর ৪০ কোটিরও বেশি মানুষ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। যা কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার থেকেও বেশি।

prayagraj

 

প্রায় ৪০০০ হেক্টর জুড়ে ১২ বছর বাদে হচ্ছে ওই উৎসব। চলবে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

এমনিতেও ভারতের সবচেয়ে বেশি লোকের বাস উত্তরপ্রদেশেই। আর তাই মহাকুম্ভ ঘিরে সে রাজ্যের সরকার খরচ করেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।

মহাকুম্ভে আসা ৪০ কোটি মানুষের প্রত্যেকে যদি গড়ে ৫ হাজার টাকাও খরচ করেন, সেক্ষেত্রে রাজ্যের কোষাগারে ২ লক্ষ কোটি টাকা আয় হবে।

আবার পুণ্যার্থীরা গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করলে ৪ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্তও আয় হতে পারে। শুধু তাই নয়, মহাকুম্ভের প্রভাবে প্রকৃত জিডিপি ১ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি হতে পারে বলে পূর্বাভাস।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের (Yogi Adityanath) কথায়, ২০১৯ সালে অর্ধকুম্ভ মেলা থেকে রাজ্য ১.২ লক্ষ কোটি টাকা আয় করেছিল। প্রয়াগরাজে সেবারে ২৪ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছিল।

তবে এবারে ৪০ কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হলে ২ লক্ষ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় হতে পারে। যোগী আরও বলেন, মহাকুম্ভ মেলা বিশ্বের বৃহত্তম অস্থায়ী শহরের সমতুল্য। যেখানে যেকোনও সময়ে একত্রে ৫০ লক্ষ থেকে ১ কোটি মানুষের থাকার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স জানিয়েছে, মহাকুম্ভে থেকে আয়ের ২ লক্ষ কোটির মধ্যে ২০ হাজার কোটি আসতে পারে প্যাকেটজাত খাবার, জল, বিস্কুট, জুস থেকে।

পুজোর সামগ্রী যেমন তেল, গঙ্গাজল, ধূপকাঠি, ধার্মিক পুস্তক থেকেও ২০ হাজার কোটি আয় হতে পারে।

অন্যদিকে ১০ হাজার কোটি করে আয় হতে পারে পরিবহণ ও পর্যটন ব্যবস্থা থেকে।

অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প, আয়ুর্বেদ ও ওষুধ বিক্রি থেকে ৩ হাজার কোটির মুনাফা উৎপন্ন হতে পারে। আবার ই-টিকিট, ডিজিটাল পেমেন্ট, ওয়াই ফাই ও মোবাইল চার্জিং বাবদ ১ হাজার কোটি টাকার মুনাফা আসতে পারে।

পরিশেষে বিনোদন, বিজ্ঞাপন ও গণমাধ্যমগুলি থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকার আয় হতে পারে বলে জানিয়েছে সিএআইটি। সব মিলিয়ে, যোগীরাজ্যে মহাকুম্ভ থেকে লাভের মুখ দেখবেন কোটি কোটি জনতা।