স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশত্যাগ করেছেন ১১ শতাংশ মানুষ : রানা দাশগুপ্ত

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

প্রতিমা ডেস্ক( ২০ অক্টোবর) :: বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, নির্বাচন এলেই দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু হয়ে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবার এ বিষয়ে সরকারকে যথেষ্ট আন্তরিক বলেই মনে হচ্ছে। দেখা যাক, পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়।

গত ১৭ অক্টোবর একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক অমরেশ রায়।

প্রশ্ন : নির্বাচন এলে প্রতিবারই ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এবার কী পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন?

রানা দাশগুপ্ত: এবারও তো মনে হচ্ছে, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এরই মধ্যে দেশের কয়েকটি স্থানে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেল। তবে এবার সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক বলেই মনে হচ্ছে। এর পরও বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

প্রশ্ন : দুর্গাপূজা সামনে রেখেও তো কয়েকটি জেলায় পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা এবং প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

রানা দাশগুপ্ত: বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা তো ঘটছে। আমরাও আমাদের সাধ্যমতো প্রতিবাদ করার চেষ্টা করছি। এখন দেখা যাক, পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়।

প্রশ্ন : প্রায় সময়ই নির্যাতিত হয়ে দেশের সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের অভিযোগ উঠছে।

রানা দাশগুপ্ত: আমরা লক্ষ্য করেছি, ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তৎকালীন পূর্ববঙ্গে সমগ্র জনগোষ্ঠীর ২৯.৭ ভাগ ছিল ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় এ সংখ্যা নেমে আসে ১৯ থেকে ২০ ভাগে। এ বছর পরিসংখ্যান ব্যুরো দেশের জনসংখ্যার যে তথ্য প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ৯.১ ভাগে নেমে এসেছে। অর্থাৎ স্বাধীনতার ৫১-৫২ বছরে দেশের প্রায় ১১ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ হারিয়ে গেল– এরা কারা? এ দেশে গণতন্ত্র ও সমাজ প্রগতির পক্ষে নির্ভীক সৈনিক হিসেবে আন্দোলন করেছিলেন যারা। স্বাধীন বাংলাদেশেও যারা গণতন্ত্র এবং সমাজ প্রগতির পক্ষে কাজ করেছেন। কেন এই সংখ্যালঘুরা দেশত্যাগ করছেন? আজ পর্যন্ত কোনো সরকার এর কারণ নির্ণয় করতে পারেনি। এ কারণেই আমরা কেন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী এ দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে কিংবা কেন তারা দেশত্যাগ করছে বা দেশে থাকতে পারছে না– সে জন্য একটি কমিশন গঠনের দাবিও তুলেছিলাম। তবে বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের সরকারের সময় সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের প্রবণতা অনেকটাই কমেছে– তার পরও এর কারণ নিরূপণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সরকারেরই দায়িত্ব। এটা যত দ্রুত করা যায়, ততই মঙ্গল।

প্রশ্ন : সংখ্যালঘুদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদকে আন্দোলনের মাঠে দেখা যাচ্ছে?

রানা দাশগুপ্ত: মাঠে আছি। প্রথমত, গত নির্বাচনে সরকারি দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘু স্বার্থবান্ধব কয়েকটি অঙ্গীকার করেছিল। ক্ষমতায় গেলে তারা সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আরেকটি নির্বাচনের সময় চলে এলেও এ ব্যাপারে সরকার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। তবে এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ঐক্য পরিষদের অনশন কর্মসূচিতে এসে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক কবীর বিন আনোয়ার সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেলেন। তার পরও এ নিয়ে তেমন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সময় গড়িয়ে যাচ্ছে, তাই আমরা আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আগামী ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমাদের একটি মহাসমাবেশও আছে। সেখান থেকেই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

প্রশ্ন : নির্বাচনের আর অল্প কয়েক মাস বাকি আছে। এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এগুলো কী বাস্তবায়ন সম্ভব বলে মনে করেন?

রানা দাশগুপ্ত: আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করছি না এই অল্প সময়ের মধ্যে দাবিগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। যেমন ধরুন জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের সর্বশেষ যে প্রতিশ্রুতিটি সরকার করল, সেটি বাস্তবায়ন করতে হলেও তো সংসদে বিল আনতে হবে। পাস করাতে হবে। সেদিক থেকে দেখলেও দেখা যাচ্ছে, পরবর্তী নির্বাচনের সংসদের মেয়াদও আর অল্প কয়েকটা দিন বাকি আছে। এখন অঙ্গীকার হয়; সেটার বাস্তবায়ন হয় না। এ সময়ের মধ্যে সরকার কী করবে, সেটা দেখার অপেক্ষায় আছি।

প্রশ্ন : আপনারা তো এটাও বলেছেন, সরকার তার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ না করলে এর প্রভাব আগামী নির্বাচনের মাঠে পড়বে?

রানা দাশগুপ্ত: আমরা তো মনে করি, এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যখন দেখবে তাদের জন্য দেওয়া সরকারের অঙ্গীকারের কোনোটাই বাস্তবায়ন হচ্ছে না– তখন তো তারাও ভোটের বিষয়ে একটু হলেও চিন্তাভাবনা করবে।

প্রশ্ন : অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন তো অনেক বছর ধরে ঝুলে আছে?

রানা দাশগুপ্ত: দেখুন, এটা তো সরকার ও প্রধানমন্ত্রীর একটা প্রজ্ঞাপন জারির অপেক্ষা মাত্র। কই সেই উদ্যোগও তো সরকারের তরফে দেখা যাচ্ছে না। এখন তো ‘দেখা যাক’ ওই শব্দটাই আবারও বলতে হচ্ছে। এর বাইরে তো আর কিছুই বলার নেই।

প্রশ্ন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

রানা দাশগুপ্ত: আপনাকেও ধন্যবাদ।