শারদীয় দুর্গোৎসব-২০২২ শুরু : মহা সপ্তমীতে মন্দিরে মন্দিরে দেবীর বন্দনা

শেয়ার করুন
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  
  •  

প্রতিমা রিপোর্ট :: শুরু হয়েছে শারদীয় দুর্গোৎসব।  শনিবার ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে সূচনা ঘটে বাঙালির শারদোৎসবের। এদিন দুর্গতিনাশিনী দেবীর অধিষ্ঠান, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল আনুষ্ঠানিকতা।

পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের প্রথম দিনে শনিবার মণ্ডপে ম পে দেবীর অধিষ্ঠান হয়। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে ষষ্ঠাদি কল্পারম্ভ ও ষষ্ঠীবিহিত পূজা শুরু হয়। এ সময় বেলতলা কিংবা বেলগাছের নিচে দেওয়া হয় ষষ্ঠীপূজা। সন্ধ্যায় দেবীর বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস ছাড়াও সব মণ্ডপে পুষ্পাঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় বিশেষ আলোকসজ্জাসহ অনেক মণ্ডপে বিশেষ প্রার্থনা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

উৎসবের দ্বিতীয় দিনে আজ রোববার মহাসপ্তমী। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে ত্রিনয়নী দেবীদুর্গার চক্ষুদান, নবপত্রিকা প্রবেশ, স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও সপ্তমীবিহিত পূজা শুরু হবে। এভাবে উৎসব চলবে আগামী বুধবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জন পর্যন্ত।

হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে আনন্দ ও উৎসাহ-উদ্দীপনার। ঢাকা মহানগরীর ২৪১টিসহ সারাদেশের ৩২ হাজার ১৬৮টি পূজামণ্ডপে এদিন দুর্গাপূজা শুরু হয়। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও যোগ দেওয়ায় উৎসব সার্বজনীন রূপ নিয়েছে। সারাদেশের মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির শব্দ দেবীদুর্গার মর্ত্যে আগমনের জানান দিচ্ছে। পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজে এখন মাতোয়ারা সারাদেশের পূজা ম পগুলো।

কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব বলে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনের মণ্ডপের সামনে বিশাল প্যান্ডেল ছাড়াও মন্দিরকে সাজানো হয়েছে নানা আঙ্গিকে। নেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সকাল ও সন্ধ্যায় ষষ্ঠীপূজার নানা আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি সন্ধ্যায় ভক্তিমূলক সংগীতানুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয় এখানে। পূজা শেষে অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ ও ভোগ আরতি ছিল উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ।

সন্ধ্যায় বোধন হবে দেবীর, জেনে রাখা দরকার কী কী করলে মঙ্গল!

 

পুজোর শুরুতেই হয় বোধন। অন্য দেবদেবীর পুজোর বোধন অত গুরুত্ব না পেলেও বাঙালির কাছে দুর্গার বোধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এর সঙ্গে মিশে রয়েছে অনেক রীতি আর বিশ্বাস।

‘বোধন’ কথার মানেই হচ্ছে জাগরণ। মানে দেবীর নিদ্রাভঙ্গের উদ্যোগ। হিন্দু বিশ্বাস মতে বছরকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। একটি দক্ষিণায়ন এবং অপরটি উত্তরায়ন। দক্ষিণায়নে দেবতাদের রাত্রি। আর উত্তরায়ন মানে দিন। সেই দিনেই দেবীর বোধন। বাংলায় দেবীর বোধনের সঙ্গে আবার রামায়ণের যোগ রয়েছে। বলা হয়, রাবণের বিনাশের জন্য রামচন্দ্র দেবীর আরাধনা করেছিলেন শরৎকালে। সেটা নিয়ম অনুযায়ী ‘অকাল’। তাই এই পুজোকে ‘অকালবোধন’ বলা হয়। শারদীয় পুজোয় ষষ্ঠীতে বোধন-মন্ত্রে সে উল্লেখও রয়েছে।

মন্ত্রে বলা হয়েছে— ‘রাবণস্য বধার্থায় রামাস্যানুগ্রহায় চ। অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যাস্তয়ি কৃতঃ পুরা। অহমপ্যাশ্বিনে ষষ্ঠাং সায়াহ্নে বোধয়ামি বৈ।’ অর্থাৎ, রাম রাবণবধের জন্য বিল্ববৃক্ষে অকালে দেবীর বোধন করেছিলেন। আমিও আশ্বিন মাসে শুক্লাষষ্ঠীর সায়াহ্নে দেবীর বোধন করছি। মন্ত্রের শেষাংশে বলা হয়, ‘যথৈব রামেণ হতো দশাস্য শত্রুন্ বিনিপাতয়ামি।।’ যার অর্থ, রাম যেমন তাঁর শত্রু রাবণকে বধ করেছিলেন তেমন আমি যেন আমার শত্রু বিনাশ করতে পারি।

শাস্ত্রবিদ নবকুমার ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘অনেক ভাববেন শত্রু বিনাশ করতে চাইব কেন? আমার তো কোনও শত্রু নেই! আসলে আমাদের মনের ভিতরেও অনেক আঁধার থাকে। সে-ও আমাদের শত্রু। তারও বিনাশের জন্য আমাদের বোধনে প্রার্থনা করতে হয়। তাতেই হয় মঙ্গল।’’