প্রতিমা রিপোর্ট(৫ অক্টোবর) :: পিতৃপক্ষের শেষক্ষণ ও মাতৃপক্ষের সূচনাকালের সময়কেই মহালয়া বলা হয়। মহান কিংবা মহত্বের আলয় (আশ্রয়) থেকেই এই শব্দের উৎপত্তি। সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, এই দিনে প্রয়াত আত্মাদের মর্ত্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, প্রয়াত আত্মার যে সমাবেশ হয় তাকেই মহালয় বলা হয়ে থাকে। যদিও এই নামের একাধিক অর্থ হয়েছে। পুরাণ, শাস্ত্র ও আভিধানিক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন অর্থ দেখা যায়।
এই তিথির সময়কাল হল অমাবস্যা। পিতৃপক্ষের শেষ লগ্নেই প্রয়াত পূর্বপুরুষদের জন্য তর্পণাদির বিশেষ সময় হিসেবে ধরা হয়। যদিও এই দিনের শুভাশুভ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। শুভ মহালয়া বলা যায় কি না তা নিয়েও দ্বিধাবিভক্ত সমাজ। তবে এর কোনও পৌরাণিক কিংবা শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা নেই। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত কিংবা গুপ্ত প্রেস অনুযায়ী কোনও ‘দিন’কে শুভ হিসেবে উল্লেখ করা থাকে না। যা থাকে তা হল ‘শুভক্ষণ’। শ্রাদ্ধ কিংবা তপর্ণে অশুচির কোনও উল্লেখ থাকে না। শাস্ত্রজ্ঞদের মতে যেহেতু পিতৃপুরুষদের জলনিবেদনের মাধ্যমে তৃপ্ত করা হয়, তাই এই তিথিতে অশুভ বলাও কাম্য নয়।
এই বছর মহালয়া পড়েছে ৬ অক্টোবর (১৯ আশ্বিন), বুধবার। পঞ্জিকা মতে-মহালয়ার অমাবস্যা তিথি শুরু ৫ সেপ্টেম্বর (১৮ আশ্বিন) , মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭.০৬ মিনিট এবং থাকবে ৬ সেপ্টেম্বর ( ১৯ আশ্বিন), বিকেল ৪.৩৫ মিনিট পর্যন্ত।
দুর্গার ঘোটকে আগমন ও দোলায় গমন এর প্রভাব
পুজোর বাকি আর হাতে গোনা কয়েকটা দিন। আগামী ১২ অক্টোবর দুর্গাপুজোর সপ্তমী। আগামী বুধবার মহালয়া, দেবীপক্ষের শুরু। দুর্গা পুজোর কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন ও তার ফলাফল নিয়ে বাঙালি সমাজে বহু কথা প্রচলিত রয়েছে। দুর্গা ও তাঁর ছেলে-মেয়ের নিজস্ব বাহন থাকলেও আগমন ও প্রস্থানের বাহনের কথা আলাদা করে পঞ্জিকায় উল্লেখ করা থাকে। হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, দুর্গার আগমন ও প্রস্থানের বাহন নির্ধারিত করে মর্তলোকে সারা বছর কেমন যাবে।
মনে রাখতে হবে পুজোর সপ্তমীতে দুর্গার আগমন। আর, গমন দশমীতে। এই দুই দিন সপ্তাহের কোন কোন বারে পড়ছে, তার উপরেই নির্ভর করে দেবীর কীসে আগমন বা কীসে গমন। শাস্ত্রে বলা আছে…
“রবি চন্দ্রে গজারূঢ়া, ঘোটকে শনি ভৌময়োঃ,
গুরৌ শুক্রে চ দোলায়াং, নৌকায়াং বুধবাসরে।”
অর্থাত্ সপ্তমী রবি বা সোমবার হলে দেবীর বাহন গজ। সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দেবীর বাহন ঘোটক। সপ্তমী বৃহস্পতি বা শুক্রবার হলে দেবীর বাহন দোলা বা পালকি। সপ্তমী বুধবার হলে দেবীর বাহন নৌকা। সেই একই ভাবে, বিজয়া দশমী যে বারে পড়বে সেই অনুযায়ী স্থির হবে দেবীর প্রস্থানের বাহন।
এই বছর ১২ অক্টোবর সপ্তমী পড়েছে মঙ্গলবার। তাই দুর্গার আগমন ঘোটক অর্থাত্ ঘোড়ায়। আগামী ১৫ অক্টোবর শুক্রবার পড়েছে বিজয়া দশমী। মা দুর্গা পুত্র-কন্যা সহ কৈলাশে ফিরবেন দোলা বা পালকির পিঠে চেপে।
শাস্ত্রমতে গজ দেবীর উৎকৃষ্টতম বাহন। তাই দেবী গজে আরোহন করে আসলে মর্তলোক ভরে ওঠে সুখ-শান্তি-সমৃদ্ধিতে। পূর্ণ হয় ভক্তদের মনোবাঞ্ছা। পরিশ্রমের সুফল পায় মর্তলোকের অধিবাসীগণ। সূচিত হয় সুবর্ষণ। অর্থাৎ অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি নয়, যতটা প্রয়োজন ততটা বর্ষণ। সপ্তমী যদি রবিবার বা সোমবার হয় তাহলে দুর্গার আগমন হবে গজ বা হাতিতে।
সপ্তমী শনি বা মঙ্গলবার হলে দুর্গার বাহন হবে ঘোটক বা ঘোড়া। ফল “ছত্র ভঙ্গ স্তুরঙ্গমে” অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। ঘোটকে আগমনে রাজায়-রাজায় বা রাষ্ট্রে-রাষ্ট্রে যুদ্ধ সূচিত হয়। সামাজিক ও রাজনৈতিকস্তরে ধ্বংস ও অস্থিরতা বিরাজ করে। এক কথায় ‘ছত্রভঙ্গম’।
সপ্তমী যদি বৃহস্পতি বা শুক্রবার হয় তাহলে দেবী দোলা বা পালকিতে আসবেন। ফল “দোলায়াং মকরং ভবেৎ” অর্থাৎ মহামারী, ভূমিকম্প, খরা, যুদ্ধ ও অতিমৃত্যু লক্ষ্য করা যায়। দোলা বা পালকিতে সূচিত হয় ভয়ঙ্কর মহামারী। যাতে বিপুল প্রাণহানি অনিবার্য।